চট্টগ্রামভিত্তিক দেশের অন্যতম বনেদি শিল্পপরিবার মোস্তফা হাকিম গ্রুপ। এ গ্রুপের ৪০ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার ফসল ও ব্যবসা প্রসারের ধারাবাহিকতায় সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গোল্ডেন ইস্পাত লিমিটেড আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করেছে ২০১৭ সালের অক্টোবরে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবং সর্বোচ্চ মান রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশের ইস্পাত খাতের অন্যতম শক্তিশালী প্লেয়ার হতে বাজারে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গ্রুপটি সূত্রে জানা যায়, দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প ও বেসরকারি খাতের ইস্পাতের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাঠক নিশ্চয়ই অবগত আছেন, ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে সরকারি-বেসরকারি খাতে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প আরও বৃদ্ধি পাবে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বড় কুমিরা এলাকায় বার্ষিক তিন লাখ টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন গোল্ডেন ইস্পাত অটো রি-রোলিং মিল নির্মাণ করেছে মোস্তফা হাকিম গ্রুপ।
প্রাথমিক পর্যায়ে কারখানাটির আয়তন ১২ একর হলেও পর্যায়ক্রমে ২০ একর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। গত আগস্ট থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে কারখানাটি। বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে উৎপাদনে রয়েছে। প্রথমদিকে ৫০০ ও ৪০০ টিএমটি বার উৎপাদনের মাধ্যমে গোল্ডেন ইস্পাতের পথচলা শুরু। এ কারখানায় সর্বোচ্চ প্রযুক্তি নিশ্চিতের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ সেটআপ আনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীবাহিনী। শুরুতে বার্ষিক তিন লাখ টন গোল্ডেন ইস্পাত ব্র্যান্ডের টিএমটি এক্সট্রিম রড উৎপাদন করবে গোল্ডেন ইস্পাত। ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হবে। এ খাতের কাঁচামাল এখনও আমদানিনির্ভর। তবে নিজেদের সহযোগী আট জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠান হতে প্রতিষ্ঠানটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিলেট উৎপাদন করে, যা কাঁচামাল হিসেবে ভূমিকা রাখে।
প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে দেশের ইস্পাতের বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ চাহিদার নেপথ্যে রয়েছে সরকারের উন্নয়নযজ্ঞ। এদিকে বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৮০ লাখ মেট্রিক টন হলেও এখন পর্যন্ত তা চাহিদার অর্ধেক। তবে আগামীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, টানেল, ছোট-বড় সেতু, শিল্প স্থাপনাসহ অনেক প্রকল্পের কাজে গতি আসবে। এছাড়া আবাসন খাতও ব্যবসায় ফিরতে শুরু করেছে। আবাসন খাত চাঙা হলে ইস্পাতশিল্পের প্রবৃদ্ধি বর্তমান পাঁচ-সাত থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত হওয়ার সুযোগ আছে। সে সম্ভাবনা, গুণগত মান, সঠিক ওজন ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরবরাহের নিশ্চয়তার মাধ্যমে সারা দেশে মানুষের আস্থা আর আগ্রহ প্রতিষ্ঠানটিকে বার উৎপাদনের জন্য প্রেরণা জুগিয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গোল্ডেন ইস্পাত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় রোলিং মিলে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ৫০০ টিএমটি বার উৎপাদন করে সারা দেশে সরবরাহ করছে।
উল্লেখ্য, বাবার গড়া ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হতে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মনজুর আলম ও বড় ভাই আবু তাহেরের ব্যবসায়িক দক্ষতা, পণ্য ও সেবার মানের কারণে মোস্তফা হাকিম গ্রুপ দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত শিল্প গ্রুপে পরিণত হয়েছে। এ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑগোল্ডেন আয়রন, গোল্ডেন স্টিল, গোল্ডেন এলপিজি লিমিটেড, এইচএম স্টিল,
মোস্তফা-হাকিম ব্রিকস, গোল্ডেন অক্সিজেন লিমিটেড, গোল্ডেন ব্রিকস ওয়ার্কস লিমিটেড, মোস্তফা-হাকিম সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মোস্তফা-হাকিম হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, মোস্তফা-হাকিম ট্রেডিং করপোরেশন, ঈগল স্টার টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
‘ইস্পাত খাতে আছে আমাদের ৩৪ বছরের অভিজ্ঞতা। সহযোগী গোল্ডেন আয়রন, গোল্ডেন স্টিলসহ মোট চারটি ম্যানুয়াল স্টিল মিলের মাধ্যমে নিয়মিত ৪০ গ্রেডের রড উৎপাদন ও বাজারজাত করছি। আমাদের গ্রুপের আট শিপইয়ার্ড থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করি। এছাড়া সিমেন্ট, ইট, আবাসন ও এলপি গ্যাসসহ সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি অবকাঠামো নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। বলা যায়, এক ছাদের নিচে আমাদের সবই আছে। সব মিলিয়ে উন্নতমানের রড সরবরাহের প্রতিশ্রুতি নিয়েই আমাদের যাত্রা। এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেই আগামীতে ইস্পাত খাতের নেতৃত্বে আসবে গোল্ডেন ইস্পাত’
সরোয়ার আলম
পরিচালক
সাইফুল আলম